আসন্ন লিসবন আর্কিটেকচার টিয়েনলে মিলেনিয়াম লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড জিতেছেন প্রখ্যাত বাংলাদেশি স্থপতি মেরিনা তাবাসশ্যুম। আর্কিটেক্টের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। পরিবেশগত নকশায় অবদান এবং প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রকল্পের নকশা তৈরির বিশেষ পদ্ধতির জন্য তিনি সুপরিচিত।

জুরি বোর্ডের বিবৃতিতে বলা হয়, মেরিনা তাঁর কাজের মধ্য দিয়ে স্থাপত্যশিল্পের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ভূমিকা পালনের অঙ্গীকারের প্রতি নিবিষ্ট থেকেছেন। প্রতিটি নতুন প্রকল্পে বিশেষভাবে মনোনিবেশ করেছেন।

আগামী ২২ সেপ্টেম্বর থেকে লিসবন আর্কিটেকচার ট্রিয়েনল শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। পরে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্তুগালের রাজধানী লিসবনে একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে পুরস্কার গ্রহণ করবেন মেরিনা তাবাসশ্যুম আর্কিটেক্টসের (এমটিএ) প্রতিষ্ঠাতা মেরিনা তাবাসশ্যুম।

স্থাপত্য বিষয়ক ওয়েবসাইট আর্কিনেক্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মেরিনার আগে কেনেথ ফ্র্যাম্পটন, আলভারো সিজার মতো স্থপতিরা এ পুরস্কার জিতেছেন। এ পুরস্কারের সর্বশেষ বিজয়ী ছিলেন ডেনিস স্কট ব্রাউন।

জুরিদের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, মেরিনার কাজ স্থাপত্যের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ভূমিকার প্রতি প্রতিশ্র“তির গভীর অনুভূতি প্রদর্শন করে। সেই সঙ্গে প্রতিটি নতুন প্রকল্পে সম্মিলিতভাবে সম্পৃক্ততার অনুভূতি তৈরির বিষয়টিও বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, মেরিনা তাবাসশ্যুমর কাজের অনন্য নীতির মাধ্যমে দায়িত্ব এবং সম্ভাব্য প্রভাবকে সরানো ছাড়াই স্থাপত্যের আধ্যাত্মিক মৌলিক বিষয়গুলোকে অনুসরণ করে।

জুরিরা জানান, মেরিনা তাবাসশ্যুমের প্রকল্পগুলো সীমিত সংস্থান এবং সীমাবদ্ধতার সঙ্গে আপস না করে শক্তিশালী, স্পষ্ট নৈতিক অবস্থান এবং পরিশীলিত নকশা প্রদর্শন করে।

মেরিনা তাবাসশ্যুমর সাহসী পদক্ষেপের মাধ্যমে পরিবেশে স্থাপত্যের ভূমিকা একটি সক্রিয় উদ্যোগে পরিণত হয়। স্থপতিরা কীভাবে জলবায়ু সংকটকে মোকাবিলা করতে পারে এবং কীভাবে একটি পরীক্ষামূলক, সম্মানজনক এবং অনুপ্রেরণামূলক পদ্ধতিতে সামাজিক পরিবর্তন আনা সম্ভব, সে বিষয়ে এটি দিক নির্দেশনা দিয়ে থাকে।

প্রাকৃতিক চক্রের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই কাজ করার ক্ষেত্রে মেরিনার কাছে প্রযুক্তিগত সমাধানের চেয়ে নিজস্ব দক্ষতা এবং উপকরণই অগ্রাধিকার পায়।

মেরিনা তাবাসশ্যুম রাজধানী ঢাকার বায়তুর রউফ মসজিদের নকশাও করেছিলেন, যা তাকে স্থাপত্যের জন্য আগা খান পুরস্কার এনে দেয়।

মেরিনা তাবাসসসুমের জন্ম ১৯৬৯ সালে ঢাকায়। শৈশবে তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে বেড়ে ওঠেন। মেরিনা ১৯৯৫ সালে আর্কিটেকচার স্কুল থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। তখন তিনি বলেছিলেন, ঢাকা ইতোমধ্যে ভোক্তা স্থাপত্যের দুর্দশায় ভুগছে।

মেরিনা তাবাসশ্যুম ওই বছরেই কাশেফ চৌধুরীর সঙ্গে নিজের প্রথম প্রকল্প আরবানা প্রতিষ্ঠা করেন। ২০২১ সালে দক্ষিণ বিশ্বের প্রথম স্থপতি হিসেবে মর্যাদাপূর্ণ সোয়েন পুরস্কার জেতার কীর্তিও রয়েছে তার দখলে।

বাংলাদেশের প্রখ্যাত এই স্থপতির কাছে স্থাপত্য হলো মানুষের কাছে সেবা পৌঁছে দেওয়ার পেশা। তার ভাষ্যমতে, ধনী এবং দরিদ্রের মধ্যে বিশাল বৈষম্যই মূলত অস্থিতিশীল পরিস্থিতির জন্ম দেয়।